top of page

আন্ধাধুন, লুডো বা মনিকা ও মাই ডার্লিংঃ ফিউ ক্যাওটিক ডিসএপয়েন্টমেন্ট্স

২০১৮ তে মুক্তি পাওয়া “আন্ধাধুন”, ২০২০ এ মুক্তি পাওয়া “লুডো” কিংবা একদম রিসেন্টলি এই গত সপ্তাহে নেটফ্লিক্সে মুক্তি পাওয়া “মনিকা ও মাই ডার্লিং”- এই তিনটা মুভির মধ্যে মিল কোথায়? তিনটা মুভিই সাধারণ দর্শকমহলে প্রচুর জনপ্রিয়তা পেয়েছে। এভারেজ IMDB রেটিং-ও এদের ৭.৬-৮.২ এবং প্রতিটা মুভিই বেশ ব্যবসা সফল। মুভিগুলোর জেনর মোটাদাগে ক্রাইম কমেডি থ্রিলার। এই বহুল জনপ্রিয় তিনটা মুভিই আমার “তেমন একটা পছন্দ না হওয়া এবং কিছুক্ষেত্রে যারপরনাই বিরক্ত লাগার” কারণ বিশ্লেষণে বসলাম (আন্ধাধুনের প্রথম হাফ ব্যতিক্রম, এই মুভির প্রবলেম ক্রিয়েশান পার্টটা আমার অন্যতম ফেভারিট, পরে বাজেভাবে খেই হারিয়ে ফেলসে)। সামগ্রিক অনলাইন রিভিউ থেকে শুরু করে আমার সোস্যাল মিডিয়ার দেওয়াল, সবই বলছে এই তিনটা মুভি দেখার পরের প্রতিক্রিয়াতে আমি বেশ মাইনরিটি, তবে ঠিক একা নই।


এই তিনটা মুভির মূল চালিকাশক্তি ক্যাওটিক ইভেন্টস এবং কিছুটা বাটারফ্লাই ইফেক্ট। বাটারফ্লাই ইফেক্ট কি যারা জানেন না, খুব ছোট করে বললে কোন আপাত তুচ্ছ জিনিস যখন কমপ্লেক্স একটা সিস্টেমে বিশাল বড় অবদান রাখে, তখন এটাকে বাটারফ্লাই ইফেক্ট নামে অভিহিত করা হয়। অনেক দূরের এক প্রজাপতির অলস ডানা ঝাপটানো পরবর্তীতে কোন একটা টর্নেডোর সূচনার অন্যতম প্রধান নিয়ামক হিসেবে দেখা দিতে পারে, এই জাতীয় একটি ম্যাথমেটিকাল এবং ওয়েদার মডেলের বর্ণনায় এই নামটা উঠে এসেছে (যদিও বাটারফ্লাই ইফেক্ট হাইলি ইনিশিয়াল কন্ডিশন ডিপেন্ডেন্ট একটা মেটাফোর, সে আলোচনায় আপাতত যাচ্ছি না) । যাইহোক, ফিরে আসি আদি অকৃত্রিম বলিউডে। উপরোক্ত তিনটা মুভিতেই, এই ধরণের আপাত তুচ্ছ একটা ঘটনা, যেমন গ্যাসের চুলা বন্ধ না করা বা কোন হান্টারের খরগোশ মারতে যেয়ে গুলি মিস হয়ে কার এক্সিডেন্ট ঘটানো টাইপ তুচ্ছ ঘটনা মূল গল্পে ব্যাপক প্রভাব রাখে। কোইনসিডেন্ট বাস্তব জীবনে হয় না তা নয় বরং এ জাতীয় একটা-দুটা ঘটনা হতেই পারে কারো কারো সাথে এক-আধবার। কিন্তু এই মুভিগুলো তাদের কল্পনার ডাইনোসরে চাকা লাগিয়ে কোইন্সিডেন্ট জিনিসটাকেই গল্পের মূল চালিকাশক্তি করে বসেছে। কমবেশি ১৫০ মিনিটের একটা মুভিতে কম করে হলেও ১০টা এমন সিন নিয়ে আসা হয়েছে যার সাথে বাস্তব জীবনের তফাৎ যোজন যোজন। প্রশ্ন রাখা যেতে পারে, মুভিতে আমরা ঠিক কতটাই বা বাস্তব জিনিস দেখি? এই জিনিসটা হাইলি কন্টেক্সট নির্ভর কারণ আমি এলিয়েন বা জোম্বি দুনিয়া দখল করে নিচ্ছে এমন একটা মুভি আর কারো বাবা-মার ঝগড়া হয়ে ডিভোর্স হয়ে যাচ্ছে টাইপ ফ্যামিলি ড্রামাতে এক ধরণের বাস্তবতা এক্সপেক্ট করবো না। এই তিনটা মুভির সেটাপ আমাদের খুব পরিচিত পরিসরঃ রেস্টুরেন্ট, হাসপাতাল, বাসার ড্রয়িংরুম কিংবা হোটেল, রাস্তার ট্রাফিক ইত্যাদি। এই পরিসরে ১-২টা র‍্যান্ডম কাকতালীয় ঘটনা যথেষ্ট হাস্যরসের যোগান দিলে তা বেনিফিট অফ ডাউট পেতেই পারে, তার সংখ্যা ১০-২০টা হয়ে গেলে আসলে মনে হয় জোর করে কাতুকুতু দিচ্ছে।

তবু, আমার থেকে অনেক অনেক এভিড ফিল্মখোরদেরও এই মুভিগুলো অনেক বেশিই ভাল লেগেছে, আমার লাগে নি, এর কারণ কি হতে পারে? আমি ছোটবেলায় যখন হারমোনিয়াম শেখার তিন-চার মাসের মাথায় সেটাতে মোটামুটি বিভিন্ন গান তুলে ফেলা শুরু করলাম, যা আমাদের টিচার কোনদিন শেখায় নি, অন্যান্য স্টুডেন্ট সহ আমার আশেপাশের অনেকেই খুব প্রশংসা শুরু করে দিল, শুধু আমার আব্বু বাদে। আব্বু নিজে হারমোনিয়ামে, গিটারে যে কোন গান অনায়াসেই তুলতে পারে। তার কাছে এটা তেমন কোন ঘটনা না। সে জানে কাজটা মোটেও কঠিন কিছু না বা এর সাথে ‘ব্রিলিয়ান্স’ ব্যাপারটার তেমন কোন সংযোগ নেই। যাইহোক, আমি খুব স্বল্প পরিসরে হলেও ছোটগল্প, উপন্যাস, মুভি স্ক্রিপ্ট লেখে থাকি। আমি যথেষ্ট বিনয়ের সাথেই বলছি, এই টাইপের গল্প লেখা খুব একটা কঠিন কিছু না। এই গল্পগুলাতে “পরবি তো পর মালির ঘাড়ে” ব্যাপারটার উপর্যুপরি ব্যবহার ঘটতেই থাকে ঘটতেই থাকে, যতক্ষণ না লেবু চিপে তিতা হয়ে যায়। খুনের অন্যতম কাগুজে এভিডেন্স উড়ে গিয়ে পুলিশের গাড়ির জানলাতেই পরে, অন্ধ সেজে গান গেতে যাওয়া প্রটাগনিস্টের সামনেই খুনের বিশাল নাটক শুরু হয়। এই গল্পগুলোতে ক্যারেকটার ডেভেলপমেন্ট খুব সামান্যই থাকে, কারণ একটা সুতার শেষ প্রান্তে পৌঁছনর অনেক আগেই আরেকটা সুতা ধরে হ্যাঁচকা টান মারা হয়। ক্যারেক্টার ডেভেলপমেন্ট করার উদ্ভট উদ্ভট চেষ্টাও চোখে পরে অনেকক্ষেত্রে, যেমন মনিকার রাধিকা আপ্তের ক্যারেকটারটা। এই মহিলা তার প্রিটেনশান এক্টিভিটি দিয়ে আমার নার্ভে রীতিমত চড়ে বসছিল। জানি না ইন্সপেক্টর/ডিটেক্টিভ ক্যারেক্টারের ক্ষেত্রে বলিউড কেনো এই চেনা ১-২টা ফরম্যাটের বাইরে যেতে পারে না। বলাবাহুল্য, মাস্‌ পিপল এখানে একমত না। বেশিরভাগের কাছে রাধিকা আপ্তে ছক্কা পিটিয়েছেন বলেই মনে হইসে। তবে একটা কথা না বললেন না যে এই গল্পগুলোর এক্সিকিউশানের জন্য লাগে টপ নচ্‌ ডিরেকশান, মিউজিক, অভিনয়। এই তিনটা ব্যাপার নিয়ে মুভি তিনটার কোনটাতেই আমার তেমন কোন কমপ্লেইন নাই। স্পেশালি মনিকার মিউজিক খুবই খুবই অসাধারণ ছিল।


ree

এই মুভিগুলার টার্গেট অডিয়েন্স আমি না, সেটা বুঝতে আইন্সটাইন হওয়ার প্রয়োজন পরে না। যেহেতু প্রতিটা মুভির রেটিং থেকে শুরু করে সব কিছু মাস্টারপিস না হলেও মোটামুটি সফল, তাই এটা প্রমাণিত এই মুভিগুলা প্রপার এক্সিকিউশান হলে বিশাল শ্রেণীর দর্শককে টানতে পারে। দিনশেষে মুভি যারা একান্ত বিনোদনের জন্যই দেখে তাদের এড্রেনালিন রাশ বা ডোপামিন ক্ষয়ের মত প্রচুর উপাদান এগুলোতে আছে। তাই কেন এখনও দেশীয় ওটিটি গুলো এই ফরম্যাটে কিছু বানাচ্ছে না, সেটা বুঝে উঠতে পারলাম না। এই “খিচুড়ি” মুভিগুলার দেশে প্রচুর দর্শক রয়েছে এবং ঠিকমত বানাতে পারলে বল সীমানার বাইরে যাবে, এতে কোনই সন্দেহ নাই। তাই দেশীয় মোড়কে এই খিচুড়ি জেনেশুনে খাওয়ার এবং ভাল না লাগার অপেক্ষায় রইলাম।

Recent Posts

See All
Don't make your character "চরিত্র-হীন"

রাইটিং-এ “ক্যারেকটার ডেভলপমেন্ট” এর বিভিন্ন টেকনিক নিয়ে ইন্টারনেটে ঘাঁটাঘাঁটি করছিলাম। বেশ কিছু ইন্টারেস্টিং আইডিয়া চোখে পড়ল তাই মনে হল...

 
 
 

Comments


bottom of page