top of page

বাজি

-কি? কি বললেন?

-ইচ্ছে করে তো নয়, একটা বাজি ধরেছিলাম।

-আর একটা বাজির কারণে একজনকে খুন করে ফেললেন?

-একজনকে নয়, তিনজনকে।

-তিনজনকে? একটা বাজির কারণে!! আবার বড় গলায় বলছেন। আপনি কি মানুষ!

-আহ্‌হা, আপনি এমন ভাবে বলছেন যেন আপনাকে খুন করেছি।

-যে একটা বাজির কারণে তিনজনকে খুন করতে পারে, আমার মত অভাজনকে খুন করা তো তার কাছে নস্যি।

-না, দেখুন, আমি ততোটা খারাপ নয়।

-সে তো বুঝতেই পারছি। দাগী খুনের আসামী এসে বলছে আমি স্বর্গের প্রহরী।

-আপনি অযথাই অন্যরকম বুজঝেন। আসলে আমি, মানে আমি খুন করিনি।

-আপনি কি বলতে চাইছেন বলুন তো মশাই। এই বলছেন তিনটে খুন করেছেন, এই বলছেন করেননি!

-বাজিটা একটু অন্যরকম ছিল।

- কিরকম?

-মানে আমি, জনসন আর মেয়েটা তিনজনেই থাকি তখন লন্ডনে, একটা অ্যাথলেট ক্লাবের সদস্য ছিলাম সবাই। সেখানেই পরিচয়।

-দাঁড়ান, দাঁড়ান। মেয়েটা কে?

-যাকে নিয়ে বাজি।

-আহ্‌, একটা নাম তো আছে তার?

-হুম, ভেরেনিকা।

-হ্যাঁ, এবার বলুন।

- আমি আর জনসন দুজনই দৌঁড়ের ইভেন্টে ছিলাম। আমার সাথে ক্লাবের প্রায় কেউই পারতো না। কালেভদ্রে যা পারত তা ঐ জনসন।

-ভেরেনিকা কিসে ছিল?

-সেও দৌঁড়ের ইভেন্টে, মেয়েদেরটাই। খুব একটা ভাল পারতো না, তবে খুব সুন্দরী ছিল। ওর থেকে ওর বোন অনেক ভাল দৌঁড়ত। প্রায় ছেলেদের মত, কারো কারো থেকে বেশি।

-বাহ্‌, পুরোই অ্যাথলেট ফ্যামিলি মনে হচ্ছে।

-হুম, তা বলা যায়। ওর দাদাও বিখ্যাত সাঁতারু ছিল।

-বলতে থাকুন।

-যাই হোক, ভেরেনিকাকে নিয়ে আমাদের মধ্যে লেগে গেল। ভেরেনিকার মন কোন দিকে তা তখনও বুঝে উঠতে পারিনি। অগত্যা আমি জনসনকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলাম। ঔ রাগের বশে তা গ্রহণ করল।

-চ্যালেঞ্জটা কি ছিল?

-পাহাড়ের উপরের একটা সমতল থেকে দৌঁড়নো শুরু করব দুজনে। ছোট্ট একটা টিলার উপরে একখণ্ড পাথরের উপর একবোতল পানি থাকবে। যে সবার আগে দৌঁড়ে গিয়ে পানির বোতলটা একঢোকে শেষ করতে পারবে, সেই ভেরেনিকাকে পাবে। আপনি জানেন কি না জানি না, বহুদূর দৌঁড়ানো শেষ করে একটুও না থেমে এতখানি পানি শেষ করা প্রচণ্ড কঠিন।

-না জানলেও বুঝতে পারছি। কিন্তু আপনাদের এই বাজিতে ভেরেনিকা রাজি হল?

-হল, আর তখনই প্রথম আমার মনে হয় ও আমাকেই ভালবাসে। কারণ আমার জয়টা প্রায় অবশ্যম্ভাবী ছিল।

-তারপর?

-তারপর আমি বাজিতে হেরে যাই!

-কিহ?

-হুম, সত্যই বলছি।

-আর তাই রাগে অপমানে জনসনকে খুন করে বসেন? ছিহ্‌!

-না, আমি খুন করিনি।

-তাহলে?

-পানিতে বিষ মেশানো ছিল।

-কিহ্‌? কে মিশিয়েছিল? আপনি?

-নাহ্‌, মেয়েটা।

-তারমানে ভেরেনিকা আপনাকে ভালোবাসতো না?

-বাসত।

-বাসলে ও কেন বিষ মেশাবে? ওতো নিশ্চয় ভাবে নি আপনি হেরে যাবেন। পানিটাতো সেক্ষেত্রে আপনারই খাওয়ার কথা ছিল।

-ও মিশিয়েছে বলিনি। বলেছি মেয়েটা।

-আহ্‌ , আর কাউকে তো দেখছি না। তো মেয়েটা কে?

-ওর বোন। আমান্ডা।

-ওর বোন!

-হ্যাঁ।

-বাজিটা তো ধরেছিলেন আপনি!

-হ্যাঁ, কিন্তু এরেঞ্জমেন্টটা ভেরেনিকা আর আমান্ডাই করে।

-সে আপনাকে মারতে চেয়েছিল? কেন?

-কারণ ও আমাকে বা ভেরেনিকা, কাউকেই দেখতে পারত না। সৎ বোন ছিল। তাই আমাকে ওর হতে দিতে চাই নি।

- কিন্তু আপনি দৌঁড়ে পারলেন না, আর মরে গেল বেচারা জনসন। এইতো?

-পারি নি না, ইচ্ছে করে হেরে গেছি।

-মানে? আপনি জানতেন পানিতে বিষ মেশানো আছে?

-নাহ্‌, তবে অনুমান করেছিলাম।

-ওহ্‌, আমি আর নিতে পারছিনা। তারপর?

-জনসন যে বিষে মারা গেছে, তা তখনও বোঝা যায় নি, মানে ভেরেনিকা বোঝে নি। ও ভেবেছে এত দূর দৌঁড়ে এসে একঢোকে পানি খেতে গিয়েই দম আটকে গেছে। আমান্ডাও সে ভানই করেছিল।

-তারপর কি হল?

-এরপর আমান্ডা নতুন নাটক শুরু করল। সেও নাকি আমাকে ভালবাসে। ব্যাস, বেঁধে গেল দুবোনের মধ্যে বচ্‌সা। আমি ভেরেনিকাকে ভালবাসি বলে বাঁধা দিতে গিয়েও কোন কাজ হল না। ততক্ষণে আমান্ডা ভেরেনিকাকে তাতিয়ে দিয়ে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে বসে। ভেরেনিকাও প্রচন্ড ক্রোধে রাজি হয়ে যায়। একি বাজি ওদের জন্যও ঠিক হল।

-তারপর আমান্ডা জিতে গেল আর আপনি তাকে খুন করলেন?

-নাহ্‌, ভেরেনিকাই জিতে যায়।

-কিহ্‌? কিন্তু আপনি না বললেন আমান্ডা ওর চেয়ে অনেক ভাল দৌঁড়াত?

-হুম, ও ইচ্ছে করে হেরে যায়!

-কিন্তু কেন?

-এবারো বিষ মেশানো ছিল পানিতে।

-তার মানে আমান্ডা পানিতে বিষ মিশিয়েই খেলতে নেমেছিল?

-না, এবার ও বিষ মেশায়নি।

-তাহলে কে মিশিয়েছিল? ভেরেনিকা?

-উহু, আমি।

-আপনি? কেন?

-আমান্ডাকে ওর পাপের শাস্তি দেয়ার জন্য। আমি জানতাম আমান্ডা জিতবে। কিন্তু শয়তানীটা সব বুঝে গিয়ে ভেরেনিকাকে জিতিয়ে দেই।

-একই কাজ আপনি করেন জনসনের বেলায়, আপনার দোষও কম নয়। যাইহোক, এরপর কি হল?

- ভেরেনিকা জনসন দু’জনই মারা গেল। বেঁচে থাকলাম আমি আর আমান্ডা। যেহেতু আমরা কেউ কাউকে দেখতে পারি না, আমরা এবার নিজেরা একটা বাজি ধরে ফেলি।

-আবার? এবার কি নিয়ে?

-এবার আর পানিটানি খাওয়া নয়, কারণ কেউ কাউকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। শুধু দৌঁড় হবে, আর আমাদের মধ্যে যে জিতবে সে তার সমস্ত সম্পত্তি অপরকে লিখে দিয়ে শহর ছেড়ে চলে যাবে, এবং এই খুনগুলোর কথা প্রকাশ করবে না।

-তারপর আপনি জিতলেন এবং কোন প্রমাণ না রাখার জন্য আমান্ডাকে খুন করলেন, এইতো? আপনি তো ভাই আসলেও মানুষ না।

-না, আমি এবারও হেরে যাই।

-কি? এবার কেন ইচ্ছে করে হারেন?

-এবার ইচ্ছে করে হারিনি ভাই, সর্বস্ব দিয়ে চেষ্টা করেছি, তবু পারি নি। ওর উপর যেন অসুরের শক্তি ভর করেছিল, আর আমার পা আর চলছিল না।

-তাই হেরে গিয়ে ওকে খুন করে ফেললেন?

-নাহ্‌, ও দিব্যি আরামে আছে, যদিও বয়স হয়ে গিয়েছে অনেক।

-বয়স হয়ে গিয়েছে মানে? আপনার তো তেমন কোন বয়স হয় নি। ওর কিভাবে বয়স হয়?

-বৃষ্টি কমে গিয়েছে। এত রাতে এই গাছতলাতে না থেকে ঐ যে দূরে একটা চায়ের দোকান মত দেখা যাচ্ছে, ওখানে ঢুকে পড়ুন। এই জায়গাটা ভাল না।

-আরে, আপনি যাচ্ছেন কোথায়? আপনি না বললেন তিনটা খুন করেছেন? আরেকটা কাকে? ওকি, শুনছেন মশাই। গল্পটা শেষ করে যান অন্তত।

লোকটা ততক্ষণে হাঁটা ধরেছে। হাঁটতে হাঁটতেই বলল, আপনি রাগের বশে যে কথাটা বারবার বলছিলেন, সেটাই ঠিক ছিল।

এরপর একটা অট্টহাসি শোনা গেল।

হতভম্ব প্রশ্নকর্তা বলল,

-মানে?

বাতাসে মিলিয়ে যাওয়ার আগে তার শেষ কথা ছিল-

-আমি আসলেই মানুষ না, আর তৃতীয় খুনটা করি নিজেকে!


Recent Posts

See All
ভর্তাবিলাস

“এই বাল দেখানোর জন্য তুই আমাকে সাত কিলোমিটার হাঁটাইলি?” কথাটা মনে হয় না রফিকের কানে ঢুকলো। সে এমনভাবে গাছটার দিকে তাকিয়ে আছে, মনে হচ্ছে ও...

 
 
 
বাগানবিলাস

১ এমন অদ্ভুত রঙের গোলাপ জাহিদ কখনো দেখে নি। ফুলের দোকানের সামনে প্রচুর ভীড় দেখে সে কৌতুহলে থেমেছিল, এবার কারণটা বুঝতে পারল। কালো-হলদু...

 
 
 
গতিসীমা পঁয়ত্রিশ

“স্যার, আপনার সাথে একটু আলাপ ছিল।” ইমন অবাক হয়ে তাকাল সামনের লোকটার দিকে। বয়স ঠিক বোঝা যাচ্ছে না, ত্রিশ থেকে চল্লিশের মধ্যে কিছু একটা...

 
 
 

Comments


bottom of page